ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম - দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত


সম্মানিত পাঠক আপনি কি চিন্তিত? আপনি কি পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার নিয়ম জানেন না। আপনি কি জানতে আগ্রহ ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম কি। এবং দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত এই সম্বন্ধে। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলে আপনার জন্য আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কথা বলব পানি খাওয়ার বিষয়টি নিয়ে পানি খাওয়ার উপকারিতা।

এবং নানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। পানি খেলে কি উপকারিতা হবে এবং সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা এই সকল বিষয়ে জানব।
ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম - দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত
আপনি যদি ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম এবং দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত। এই সম্পর্কে আগ্রহ হয়ে থাকেন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। চলুন শুরু করা যাক

ভূমিকাঃ ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম - দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত

আজকে আমরা অন্যরকম টপিক নিয়ে কথা বলব। প্রিয় পাঠক আমরা জানি মানুষ মাটির তৈরি। আপনি কি জানেন মানুষের শরীরে যতটুকুন মাঠে তার চেয়ে বেশি পানি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে ষাট ভাগ পানি রয়েছে।

আমরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করি এবং ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম এই বিষয়টি ঠিক মতন মেনে চলি তাহলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে এবং সোয়াবেরও কাজ হাসিল হবে।

এবং দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত ও পানি খাওয়ার উপকারিতা সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা এবং রাত্রে পানি খাওয়ার নিয়ম আমরা কথা বলেছি। আজকেরে আর্টিকেলে আমরা এই সকল টপিক নিয়ে কথা বলেছি।

পানি খাওয়ার উপকারিতা

পানি আমরা সবাই এই নামটি চিনে থাকি। কারণ এই পানি আমাদের নিত্যদিনে নানান কাজে ব্যবহৃত হয়। পানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটি বলে বোঝানো যাবে না।পানির অপর নাম জীবন পানি না খেলে তৃষ্ণা অনুভব হয়। এবং আমরা তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করি কিন্তু এটা ঠিক নয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে ৬০% পানি থাকে যেটি শরীরের ওজন এবং আয়তন দিক থেকে উভয়ই শরীরের বড় একটি অংশ ।এবং একটি নবজাতকের ৭৫% হয়ে থাকে। পানি আমাদের শরীরের অনেক উপকারে আসে এটি খাওয়ার ফলে যেসব উপকারিতা হয়ে থাকে এসব নিচের আলোকে বিস্তারিত দেখুন

  • কিডনি ভালো থাকে ।পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাবার ফলে আমাদের শরীরে কিডনি ভালো থাকে কিডনির কাজ হচ্ছে আমাদের শরীরের তরল বর্জ্য নিষ্কাশন করা। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করার ফলে আমাদের দেহের বর্জ্য নিষ্কাশনের একটি বড় ভূমিকা পালন করে পানি।
  • ত্বক সুন্দর রাখে। আমরা পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ পান করলে আমাদের ত্বকের সজীবতা বজায় থাকবে। কারণ পানি আমাদের ত্বকের সজীবতা এবং কোমল রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • হজম শক্তি বজায় রাখে ।খাবার খাওয়ার পর পানি খাওয়া খুবই জরুরি কারণ। পানি আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে থাকে। আমরা যদি খাওয়ার পর পরিমাণ মতো পানি পান না করি তাহলে আমাদের পরিপাকতন্ত্র সঠিক ভাবে খাবার হজম করতে পারেনা। এর ফলে দেখা দেয় বদহজম ও পেট ফাঁপা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাগুলো। এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।

দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত

পানি খাওয়া অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কারণ। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকবে ।আমরা পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে আমাদের শরীর অসুস্থ হয়ে যাবে। আমাদের তৃষ্ণা লাগলেই যে আমরা পানি পান করবো এমনটা নয়। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে দৈনন্দিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গা গ্লাস পানি পান করা উচিত।

আচ্ছা এটি ভালোভাবে বোঝানোর জন্য একজন পূর্ণবয়স্ক নারী অথবা পুরুষ প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত। তবে এটি নির্ভর করবে আবহাওয়া শারীরিক এবং শ্রম বিনিময়ের মাধ্যমে। যারা হার্ডওয়ার করে তাদের জন্য দিনে তিন লিটার পানি খাওয়া উচিত ।এবংযারা সূর্যের আলোতে বা বাইরে রোধে কাজ করেন তাদেরকে দিনে ৪ লিটার পানি পান করা উচিত।

পানি পান করা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী কারণ। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার ফলে ভেতরের ময়লাগুলো পরিষ্কার হয় এবং বদ হজম থেকে রেহাই পায়।

সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা

আপনাদের হয়তো অনেকেই চিন্তাই পড়ে যান সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মনে হয় পানি খাব কি খাব না। সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার উপকারিতা বা কি। আমরা যেমন রাতে ঘুমাই সাত থেকে আট ঘন্টা সে সময় আমাদের খাদ্যনালীতে গ্যাস পরিণত হয়ে থাকে। 

আপনি যখন সকালে ঘুম থেকে ওঠেন তখন যদি এক গ্লাস পানি খান তাহলে আপনার পেটে থাকা গ্যাসের রস গুলি আস্তে আস্তে কমে যায় । এবং আপনার হজম শক্তির বৃদ্ধি করে। এবং আপনার শরীর ডিহাইড্রিড থেকে দূর হয়ে যায়। এবং আপনি যদি সকালে খালি পেটে পানি পান করেন তাহলে আপনার শরীরের রক্ত কোষ তৈরি হবে আর রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে।

এবং আপনার শরীরের ভেতর যে রক্ত দূষিত রয়েছে সে পদার্থ গুলি বের করে দিবে। আপনি যদি ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন সকালে একগ্লাস করে পানি খান তাহলে আপনার শরীরে থাকা দূষিত পদার্থ বের হয়ে যাবে এবং আপনার কিডনির থেকে বর্জ বের করার জন্য পানির দরকার হয় ।

ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম

পানি হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার অশেষ এক নিয়ামত। পানি মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন আর আমি প্রানবান সবকিছুই সৃষ্টি করলাম পানি থেকে তবুও কি তারা ঈমান আনবে না? (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩০) দৈনন্দিন পর্যাপ্ত পানি পান করা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার আমরা সঠিক নিয়মে পানি পান করলে ।

আমাদেরকে কিডনি এবং পাকস্থলী ঠিক থাকবে। আপনি যদি বিশুদ্ধ পানি পান করেন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খান তাহলে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা পাবেন। এখন ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম গুলি আপনি সঠিকভাবে পালন করেন। তাহলে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার পাশাপাশি সোয়াবেরও কাজ হবে।

আল্লাহ তা'আলা পানিকে শুধুমাত্র মানুষের তৃষ্ণা মেটানোর জন্যই তৈরি করেননি। পানিকে তৈরি করা হয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের উপকরণ হিসেবে। পানির অপর নাম হচ্ছে জীবন। পানি পান করার সময় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্ট কিছু আমল করতেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর বাস্তব জীবন এবং আমলগুলো উঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়
  • পানি ডান হাতে পান করা। কারণ শয়তান বাম হাতে পানি পান করে।(সহিহ মুসলিম২/১৭২)
  • বসে পানি পান করা, দাঁড়িয়ে পানি পান করা নিষেধ।(সহিহ মুসলিম, ২/১৭৩)
  • শুরুতে(বিসমিল্লাহ) পড়া এবং শেষে(আলহামদুলিল্লাহ) পড়া।(সুনানে তিরমিজি হাদিসঃ২/১০)
  • তিনশ্বাসে পানি পান করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন তোমরা এক চুমুকে উটের মতন পানি পান করোনা, বরং দুই তিনবার শ্বাস নিয়ে পানি পান করো। (সুনানে তিরমিজি, হাদিসঃ১৮৮৫)
  • গ্লাস এর যে ভাঙা অংশ রয়েছে। সেই ভাঙ্গা অংশ দিক থেকে পানি পান না করা(সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ২/১৬৭)
  • ক্লাসে নিশ্বাস না ফেলা হযরত (সাঃ) বলেন, তোমরা পানি পান করার সময় পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলো না।(সহিহ বুখারী, হাদিসঃ ১৫৪)
  • পরিষ্কার পাত্রে পানি পান করা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন পানির পাত্র পরিষ্কার না করে যেন পানি পান না করে।
  • অজু করা হয়ে গেলে যে পাত্রে পানি নেওয়া হয়েছিল সে পাতের অবশিষ্ট পানি কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেপান করা। এটি করার ফলে বিভিন্ন রোগ ব্যাধি হতে রেহাই পায়।(বুখারি ,হাদিসঃ৫৬১৬)

রাতে পানি খাওয়ার নিয়ম

পৃথিবীতে প্রতিটি জিবি বেঁচে থাকার জন্য পানি পান করে থাকে। আমাদের মানবদেহে প্রায় ৬০ শতাংশ পানি রয়েছে। আমাদের প্রতিটি কোষী টিস্যু এবং অঙ্গে উপস্থিত থাকে। তবে আপনি যদি রাতে ঘুমানোর আগে পানি পান করেন তবে এমন কিছু সমস্যা ভুগতে পারেন যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ঘুমাতে যাওয়ার আগে পানি পান করার ফলে আপনার ঘুম চোখে ব্যাঘাত করতে পারে যেমন রাত্রে প্রসাবের জন্য আপনাকে বাথরুমে যাওয়া লাগতে পারে। মূলত আমাদের প্রস্রাবের আউটপুট রাতে কমে যায় এটি আমাদেরকে পাঁচ থেকে সাত ঘন্টা শান্তিতে ঘুমাতে দেয়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে এক বা একাধিক গ্লাস পানি তাহলে আপনার একাধিকবার প্রস্রাব হতে পারে।

পরের দিন শরীর জ্বালা এবং উচ্চ রক্তচাপ এবং হতে পারে। এটি হতে পারে ৪৫ বছর বেশি বয়স্ক আর প্রাপ্তবয়স্ক যারা রাতে ৬ ঘন্টা কম ঘুমাতে দেন তাদের স্টকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে পানি পান করলে যাদের বয়স কম রয়েছে তাদের তত সমস্যা হয় না। আপনাকে ঘুমাতে যাওয়ার দুই ঘন্টা আগেই পানি পান করার চেষ্টা করতে হবে।

আপনাকে রাতে খাবার খাওয়ার পরে এক থেকে দুই গ্লাস পানি পান করতে হবে। এটি করার ফলে আপনার স্বাস্থ্যের অনেক উপকার হবে।

শেষ কথাঃ ইসলামে পানি খাওয়ার নিয়ম - দিনে কত লিটার পানি খাওয়া উচিত

সম্মানিত পাঠক আপনি হয়তো এতক্ষণে পানি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহতালা পানির মধ্যে কত নিয়ামত দিয়ে রেখেছেন। আপনি যদি ইসলামী নিয়মে সুন্নতি পানি পান করেন। তাহলে আপনার শরীরের রোগ থেকে মুক্ত পাবেনএবং সোয়াব হাসিল করে নিবেন। আপনাকে যদি আজকের এই আর্টিকেল লিভ ভালো লেগে থাকে ।

তাহলে আপনার সুন্দর মন্তব্য আমাদেরকে জানাবেন। আপনাকে আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে আপনার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে এটি শেয়ার করবেন। এবং আমাদের পেজটি ফলো করে রাখবেন। দেখা হচ্ছে অন্য আর্টিকেলে ।আল্লাহ হাফেজ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কুইক ফাইন লাইন এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url